মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৮ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনার পরিবারের ইশারায় চলছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন

রিপোর্টার :

সংবাদটি শেয়ার করুন....

শেখ হাসিনার পরিবারের ইশারায় এখনো চলছে বিসিসি’র কার্যক্রম!

বিশেষ প্রতিনিধি

শেখ হাসিনার পরিবারের অদৃশ্য ইশারায় এখনো চলছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি) ‘র দাপ্তরিক কার্যক্রম।টানা দুই পরিষদেই শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই ও ভাইয়ের ছেলে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময়ে কর্পোরেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শাখায় নিয়োগ প্রদান করে আসছে।

মেয়েরের মেয়াদ শেষ হওয়া ছাড়াও গেলো পরিষদের মেয়র স্বল্প কিছুদিন দায়িত্ব পালন করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের সাথে সাথে নিজেকেও আত্মগোপনে নিয়ে গেছেন স্বপরিবারে খোকন সেরনিয়াবাত ও সাদিক আব্দুল্লাহ ৷ কিন্তু তাদের বিভিন্ন সময়ে নিয়োগকৃতরা পুনরায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার নগ্ন মিশন বাস্তবায়নে সাবেক মেয়রদের শেখ পরিবারের ইশারায় উৎকোচ দিয়ে বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট কতিপয়দের সাথে সক্ষতা গড়ে বহাল থাকতে এবং নিজেদের পরিচয় আড়াল রাখতে গোপনীয়তা বজায় রেখে চলছে এমন বিষয় নগরভবনের বিভিন্ন শাখার দেয়ালেই কান পাতলে কানাঘুঁষা শোনা যায়।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ র বড় ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বিসিসি’র মেয়র থাকা কালীন সময়ে কার্য স্বার্থে তিন বছরের মেয়াদে চুক্তি ভিত্তিক শর্তসাপেক্ষে টাউন প্লানার পদে অস্থায়ী নিয়োগ প্রদান করা হয় সানজিদ হোসেন কে। নিয়োগপ্রাপ্তির পর থেকেই অনিয়ম দূর্ণিতি করে রাতারাতি তার আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে।

২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর বিসিসি’র সচিব ও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব সাক্ষরিত বিসিসি /প্র:চু:নি:নথি-১২/১৯-২৯৪(৭) নং স্মারকে প্রশাসনিক শাখার নিয়োগপত্রের উল্লেখ্য তথ্য অনুযায়ী জানা যায়,”বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাজের স্বার্থে ০৩(তিন) বছর মেয়াদি সম্পূর্ন অস্থায়ী ভিত্তিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নিমিত্তে নিয়োগ কমিটি কতৃক ১৪/১১/২০২০ ইং তারিখ লিখিত মৌখিক /ব্যবহারিক পরিক্ষায় ফলাফলের ভিত্তিতে জনাব সানজিদ হোসেন পিতা:আব্দুল হান্নান, গ্রাম, সাড়া গোপালপুর ডাকঘর পাকশী -৬৬২২,উপজেলা :ঈশ্বরদী,জিলা:পাবনা কে সর্বসাকুল্যে প্রতিমাসে ৩৫,০০০/ (পয়ত্রিশ হাজার) টাকা চুক্তিমূল্য নির্ধারন পূর্বক ‘টাউন প্লানার পদে

০১/ এ নিয়োগ চাকুরীতে যোগদানের তারিখ থেকে ০৩(তিন) বছর মেয়াদ পূর্তিতে চাকুরীকাল সমাপ্ত বলে গন্য হবে। ০২/ চাকুরীতে যোগদানের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে অবশ্যই নিয়োগকারী কতৃপক্ষের দেয়া (২৫০/-(দুইশত পঞ্চাশ -) টাকা মূল্যমানের নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে) চুক্তিপত্রের সকল শর্তাবলী মেনে চলতে হবে, ০৩/ যোগদানের সময় সিভিল সার্জনের নিকট হতে হালনাগাদ স্বাস্থ্যগত সার্টিফিকেট ও অন্যান্য সনদপত্রে কোন ধরনের বিরুপ মন্তব্য পাওয়া গেলে এ নিয়োগ বাতিল বলে গন্য হবে। ০৫/ অন্য কোন সংস্থা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের ছাড়পত্র সহ নিয়োগপত্র প্রাপ্তির ০৭(সাত) কর্মদিবসের মধ্যে অত্র সিটি কর্পোরেশনে যোগদান করতে হবে, অন্যথায় এ নিয়োগ বাতিল বলে গন্য হবে। ০৬/প্রার্থীকে চাকুরির শৃঙ্খলা পরিপন্থি অপরাধের ক্ষেত্রে কোন কারন দর্শানো ব্যতিরেকে চাকুরীচ্যুত করা যাবে।০৭/ যোগদানের জন্য কোন প্রকার টি.এ/,ডি এ, প্রদান করা হবে না।

উপরোক্ত সকল শর্ত সাপেক্ষে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো মর্মে প্রশাসনিক শাখা থেকে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহনে ও অনুলিপি সদয় অবগতির জন্য ০১/ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরিশাল। ০২/ সিভিল সার্জন বরিশাল। ০৩/ সহকারী, একান্ত সচিব মেয়র বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরিশাল। ০৪/ বাজেট কাম হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা,বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরিশাল। ০৫/ বিভাগীয় /শাখা প্রধান (সকল) বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরিশাল। ০৬/জনাব,সানজিদ হোসেন, পিতা : আব্দুল হান্নান, গ্রাম: সাঁড়া গোপালপুর,ডাকঘর পাকশী। ০৭/ অফিস কপি অনুলিপি প্রদান করা হয়।

এরপর ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাক্ষরিত বিসিসি-প্র:ব্য:নথি -০১/২১-৭২(৬) নং স্মারকে অফিস আদেশে জনাব সানজিদ হোসেন টাউন প্লানার (চুক্তিভিত্তিক), বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বরিশাল এর ১৪/১২/২০২৩ তারিখ চাকরির মেয়াদ ০৩ ( তিন)বছর পূর্ন হওয়ায় চুক্তিপত্রের প্রথম শর্তানুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগাদেশবাতিল মর্মে গন্য হলো। এ আদেশ ১৫/১২/২০২৩ তারিখ থেকে কার্যকর হবে৷

সিটি কর্পোরেশনের চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ প্রদানের যে সকল শর্ত অনুযায়ী কতৃপক্ষ নিয়োগ চূড়ান্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা উপেক্ষা করে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করার কোন সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও কতিপয় অসাধু কর্তাব্যক্তিদের সাথে গোপন সক্ষমতা গড়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবমাননা করা সহ নন জুডিশিয়াল ২৫০ টাকার মূল্যের স্ট্যাম্পে চূক্তিপত্রে র শর্ত মেনে সাক্ষর করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী তাদের কার্যক্রমকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে৷ অথচ শর্ত ভঙ্গের পাশাপাশি আইন অমান্য করে উর্ধতন কতৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানো হলেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনেও নীরব ভূমিকা পালন করছে বিসিসি কতৃপক্ষ ।

বিসিসি’র আইন উপদেষ্টা সিটি কর্পোরেশন এর স্বার্থ এবং সঠিক আইনের ভিত্তিতে নিয়োজিত থাকার বিষয় থাকলেও অদৃশ্য ইশারায় শর্ত মানার স্ট্যাম্পের বিষয়ের উল্লেখিত শর্ত নিজেই ধামাচাপা দিয়ে খোদ নগরকতৃপক্ষের বিরুদ্ধেই নিজেকে দাড় করানোর ভূমিকায় আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে নগরভবনের কর্মরতদের টেবিলের আড্ডায়। এ বিষয় প্রকৌশলী শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ্ খোকন সেরনিয়াবাতের স্নেহধন্য আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত এ্যাড বাহাদুর শাহ্ কে বিসিসি’র আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে তিনি সেই পরিবারের ইশারায় কাজ করবে না তো কার ইশারায় করবে ? নিয়ম অনুযায়ী শর্ত অনুযায়ী যে কর্মচারী শর্ত মেনে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনরায় নিয়োগ প্রাপ্ত হতে শর্ত ভঙ্গ করে মামলা দায়ের করেছে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের পরিবর্তে উল্টো তার হয়ে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়াতে কতৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিপরীতে অবস্থান নেয়ার বিষয় আমার বোধগম্য হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও তৎকালীন সময়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন বিসিসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিসংখ্যানবীদ বঙ্গবন্ধু পেশা জীবী পরিষদের নেতা হওয়া সুবাদে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে আসিন হয়ে ব্যাপক অনিয়ম দূর্ণীতি করে মেয়রের খোরাক জুগিয়ে অঢেল অর্থের মালিক বনে আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছে তার৷ চুক্তি ভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগকৃত টাউন প্লানার কে সম্পূর্ণ নিয়মবহির্ভূত ভাবে মেয়রের মগজ ধোলাই করে তাকে দিয়ে জাতীয় পেস্কেলের অন্তরর্ভূক্ত করে বেতন ভাতা বৃদ্ধি সহ পদোন্নতি প্রদান করার মত অনিয়মকে নিয়ম করে চালিয়ে দেয়ার ঘটনাও তৎকালীন সময়ে। চাকুরী বিধি লঙ্ঘন করে নিয়োগ পদোন্নতি সহ বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় এখনো বিদ্যমান রয়েছে । জানা গেছে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে অনেক অনিয়ম দূর্ণীতির রেকর্ড ব্রেক করায় দূর্ণিতির বরপুত্র হিসেবেও ক্ষ্যাতী লাভ করে পরিসংখ্যানবীদ স্বপন কুমার দাস। তার ভরসায় চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদোত্তীর্ণ টাউনপ্লানার সানজিদ কাউনিয়া প্লটের জন্য ৩ লক্ষ টাকা, এবং বালু ভরাট প্রাচির নির্মান স্টল বাবদ ৩ লাখ টাকা জমা দিয়েছে, এছাড়াও সম্পত্তি শাখার দায়িত্ব থাকা অবস্থায় সার্ভেয়ারদের থেকে মাসোহারা এ বিভিন্ন তদবীর বানিজ্য করে উৎকোচ গ্রহনের বিষয় সার্ভেয়ার শাখা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়।তার এমন তথ্যের বিষয় নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে ।

এবিষয়ে বিসিসি’র টাউন প্লানার পদে অস্থায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ কর্মচারী সানজিদ হোসেনকে না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এবিষয়ে বিসিসি’র আর আই শাখার দায়িত্বে থাকা পরিসংখ্যানবীদ বঙ্গবন্ধু পেশা জীবী পরিষদের নেতা স্বপন কুমার দাস তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে তেমন কোন সদুত্তর দিতে না পারলেও অস্বীকার করার মতো সুযোগ পায়নি তিনি।

এ বিষয়ে বিসিসি’র প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃআলমগীর হোসেন জানান চাকরিবিধি মোতাবেক চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ এর মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নিয়মানুযায়ী নিয়োগ বাতিল হয়েছে।

  1. এবিষয়ে বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃরেজাইল বারী বলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চাকুরী বিধি মোতাবেক নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন....



আমাদের ফেসবুক পেজ