মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন

যেভাবে ডিবির হাতে গ্রেফতার হলো আমির হোসেন আমু

রিপোর্টার :

সংবাদটি শেয়ার করুন....

ডিবি দেখে চুপসে যান আমু, এরপর যেভাবে গ্রেফতার হন।

শাহরিয়ার ইসলাম। ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি

দীর্ঘদিন গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকার পর অবশেষে গোয়েন্দা জালে ধরা পড়েন একসময়ের দাপটে রাজনীতিবিদ আমির হোসেন আমু। ৫ আগস্ট তার দল আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের দিন থেকে পলাতক ছিলেন ১৪ দলের এই সমন্বয়ক ও মুখপাত্র। গ্রেপ্তার এড়াতে বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন তিনি।

সর্বশেষ রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডির হাজারীবাগের মধুবাজার এলাকায় এক আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান নেন অনেক মামলার আসামি এই আওয়ামী লীগ নেতা। তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরই গোয়েন্দারা অভিযান চালান ওই বাড়িতে।

অভিযানে অংশ নেওয়া একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ঢাকা টাইমসকে জানান, ডিবি পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চুপসে যান আমির হোসেন আমু। লুঙ্গি পরা আমু তখন একটা রুমে একা বসে ছিলেন। ডিবি পুলিশের পরিচয় পেয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি, কেবল নিজের প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় নেন।

এ সময় আমুর হেফাজতে কোনো টাকা-পয়সা পাওয়া যায়নি। একাধিক গণমাধ্যমে খবর ছিল, আমির হোসেন আমু ব্যাংকে টাকা রাখেন না। নগদ টাকা ঘরে রাখতেন, টাকার তোষকে ঘুমাতেন। অবশ্য তার ঝালকাঠি ও ঢাকার বাসা থেকে কোটি কোটি টাকা ও বিপুল বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয় ৫ আগস্ট ও তার পরে। সেসময় তার বাসায় ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন।

ওষুধসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে আমু ডিবি পুলিশের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন ঘর থেকে। তাকে হাজারীবাগের ওই বাড়ি থেকে নামিয়ে এনে গাড়িতে তোলা হয়। বর্তমানে তিনি ডিবি হেফাজতে মিন্টো রোডের প্রধান কার্যালয়ে আছেন।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে হত্যা, গুমসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ১৪ দলের এই সমন্বয়ককে।

সন্ধ্যায় ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মিজানুর রহমান মিজান বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৩টি মামলার তথ্য মিলেছে। আরও মামলার সন্ধান চলছে। তবে কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এর আগে দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক  বলেন, সরকার পতনের পর থেকে পলাতক ছিলেন আওয়ামী লগের প্রভাবশালী এই নেতা। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হচ্ছিল। আজ তার অবস্থান শনাক্তের পর ধানমন্ডি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ বহু মামলা রয়েছে। ডিবি কার্যালয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য মিলবে।

যেভাবে অবস্থান শনাক্ত ও গ্রেপ্তার

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গত রাতে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন পশ্চিম ধানমন্ডির একটি বাসায় আত্মগোপনে আছেন সাবেক এই মন্ত্রী। ভোরে তার বাসার আশপাশে অবস্থান নেন গোয়েন্দারা। বেলা সাড়ে বারোটার দিকে সেখানে গোয়েন্দা পুলিশের লোকবল বাড়ানো হয়। এরপর বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও সদস্য।

দরজায় কড়া নাড়লে বেশ কয়েক মুহূর্ত ভেতর থেকে সাড়া পাওয়া যায় না। পরে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিলে দরজা খুলে দেন কেউ একজন। ডিবি সদস্যরা একযোগে বিভিন্ন রুমে তল্লাশি করেন । একটি রুমে দেখা মেলে আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতার। একা বসা। পরণে লুঙ্গি। তাকে বলা হয়, তাদের সঙ্গে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যাবেন তিনি।

শুনে চুপসে যান আমির হোসেন আমু। কিছুটা সময় নীরব থাকেন। একটু ধাতস্থ হয়ে কয়েক মিনিট সময় চান তিনি প্রস্তুতির জন্য। পোশাক পরিবর্তন এবং ওষুধসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেন। এরপর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে নিচে নেমে আসেন তিনি। তাকে গাড়িতে তুলে সরাসরি ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যান গোয়েন্দারা।

সাধারণ মানুষের জমি দখল, চাকরি দেওয়ার নামে অর্থ আদায়, নামমাত্র দামে জমি লিখে নেওয়া, চাঁদাবাজি সহ নানা অপকর্মের খবর নানা গণমাধ্যমে আসছে আওয়ামী লীগের এই সাবেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যের বিরুদ্ধে। শেষ দিকে দলে কিছুটা কোণঠাসা থাকলেও বিরোধী দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবিলায় পোড় খাওয়া আমুকে সামনে আনতেন শেখ হাসিনা। পরামর্শ করতেন তার সঙ্গে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছা্ত্র আন্দোলনের চরম মুহূর্তে ১৪ দলের বৈঠকে দেখা গেছে আমু ও শেখ হাসিনাকে। আন্দোলন দমনে কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।

আমির হোসেন আমু ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠি ও রাজাপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ঝালকাঠি-২ আসন থেকে ২০০০ সালের উপনির্বাচনে এবং ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রীর (টেকনোক্র্যাট) দায়িত্ব পান আমির হোসেন আমু। ২০১৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়ে শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমু ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ (মালেক) থেকে। পরের যে নির্বাচনগুলোয় আওয়ামী লীগ অংশ নেয়, তার সব কটিতেই দলের মনোনয়নে ভোট করেন এই প্রবীণ নেতা।


সংবাদটি শেয়ার করুন....



আমাদের ফেসবুক পেজ